Gorumara National Park- Reveal Hidden Gems in 2025
#Gorumara National Park

Gorumara National Park- Reveal Hidden Gems in 2025

Bhaktilipi Team

কখনো কি মনে হয়েছে শহরের কোলাহল থেকে দূরে, প্রকৃতির গভীরে হারিয়ে যেতে? যেখানে সকাল হয় পাখির গানে আর কুয়াশার চাদর সরিয়ে উঁকি দেয় কাঞ্চনজঙ্ঘা। আমার এমনই এক অনুভূতি হয়েছিল যখন প্রথমবার পা রেখেছিলাম ডুয়ার্সের মাটিতে, আর সেই অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু ছিল গোরুমারা ন্যাশনাল পার্ক (Gorumara National Park)। এটা শুধু একটা জঙ্গল নয়, এটা একটা জীবন্ত পৃথিবী, যেখানে প্রতিটি ঘাসের ডগায়, প্রতিটি নদীর বাঁকে লুকিয়ে আছে এক নতুন গল্প।

আজ আমি আপনাদের সেই গল্পই শোনাতে এসেছি। চলুন, আমার সাথে ঘুরে আসা যাক গোরুমারার সেই সব লুকানো পথে, যা আপনার ২০২৫ সালের ভ্রমণ তালিকাকে করে তুলবে অবিস্মরণীয়।

ডুয়ার্সের হৃৎপিণ্ড: কেন গোরুমারা এত বিশেষ?

পূর্ব হিমালয়ের পাদদেশে, জলপাইগুড়ি জেলায় অবস্থিত এই জাতীয় উদ্যানটি কেবল একটি পর্যটন কেন্দ্র নয়, এটি প্রকৃতির এক অসাধারণ সৃষ্টি। এখানকার সবুজ ঘন জঙ্গল আর বয়ে চলা মূর্তি ও জলঢাকার মতো নদীগুলো এখানকার পরিবেশকে এক স্বর্গীয় রূপ দিয়েছে। গোরুমারার আসল পরিচয় তার একশৃঙ্গ গণ্ডারের জন্য, যা ভারতের গর্ব। একসময় বিলুপ্তির পথে থাকা এই বিশাল প্রাণীটিকে সংরক্ষণের ক্ষেত্রে গোরুমারার সাফল্য সত্যিই প্রশংসার যোগ্য। এখানে এসে যখন নিজের চোখে একটা গণ্ডারকে শান্তিতে ঘাস খেতে দেখবেন, তখন বুঝবেন প্রকৃতিকে রক্ষা করাটা কতটা জরুরি।

এই পার্কটি শুধু জীবজন্তুর আশ্রয়স্থল নয়, এটি পশ্চিমবঙ্গের সংরক্ষিত এলাকার এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা এই অঞ্চলের পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।

জীবনের সিম্ফনি: গোরুমারার উদ্ভিদ ও প্রাণীজগত

গোরুমারার জঙ্গলে ঢুকলে মনে হবে যেন এক অন্য জগতে এসে পড়েছেন। শাল, সেগুন আর শিরীষ গাছের লম্বা সারি আকাশকে ছুঁতে চাইছে, আর তার নিচে রয়েছে ঘন বাঁশের জঙ্গল আর লম্বা ঘাসের প্রান্তর। এই বৈচিত্র্যময় পরিবেশই এখানকার বন্যপ্রাণীদের নিশ্চিন্ত আশ্রয়।

  • এশীয় হাতি (Asian Elephants): এখানে আপনি দেখতে পাবেন বিশাল হাতির পাল কীভাবে দলবেঁধে জঙ্গলের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে নির্ভয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের এই স্বাধীন বিচরণ দেখাটা এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা, যা আপনাকে প্রকৃতির বিশালতার কথা মনে করিয়ে দেবে।
  • গৌর বা ভারতীয় বাইসন (Gaur or Indian Bison): বিশাল আকারের এই প্রাণীগুলোকে প্রায়শই জঙ্গলের ধারে বা নদীর পাড়ে ঘাস খেতে দেখা যায়। তাদের শান্ত অথচ শক্তিশালী চেহারা আপনাকে মুগ্ধ করবেই, আর তাদের দলের শৃঙ্খলা দেখে অবাক হতে হয়।
  • চিতাবাঘ ও অন্যান্য শিকারি প্রাণী (Leopards and other predators): যদিও চিতাবাঘ বা স্লথ বেয়ারের দেখা পাওয়াটা ভাগ্যের ব্যাপার, কিন্তু জঙ্গলের নিস্তব্ধতায় কান পাতলে তাদের অস্তিত্ব অনুভব করা যায়। প্রতিটি মুহূর্তে একটা রোমাঞ্চ কাজ করে, এই বুঝি দেখা মিলল জঙ্গলের কোনো গোপন রহস্যের।

শুধু বড় প্রাণীই নয়, গোরুমারা পাখিদেরও স্বর্গরাজ্য। প্রায় ২০০ প্রজাতির পাখির কলরবে এখানকার জঙ্গল সারাদিন মুখরিত থাকে। হর্নবিল, কাঠঠোকরা থেকে শুরু করে ছোট ছোট সানবার্ড—বার্ড ওয়াচারদের জন্য এটি এক আদর্শ জায়গা।

আপনার ২০২৫ সালের গোরুমারা ভ্রমণ: কীভাবে অভিজ্ঞতাকে সেরা করে তুলবেন?

গোরুমারার আসল সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে সঠিক সময়ে যাওয়াটা খুব জরুরি। নভেম্বর থেকে মার্চের মধ্যে আবহাওয়া থাকে সবথেকে মনোরম এবং এই সময়েই বন্যপ্রাণী দেখার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে। তবে মনে রাখবেন, বর্ষাকালে, অর্থাৎ ১৫ই জুন থেকে ১৫ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পার্কটি বন্ধ থাকে।

এখানে ঘোরার সেরা উপায় হলো জিপ সাফারি। একজন অভিজ্ঞ গাইডের সাথে খোলা জিপে জঙ্গলের গভীরে প্রবেশ করার রোমাঞ্চই আলাদা। ভোরবেলা বা পড়ন্ত বিকেলে সাফারি করলে বন্যপ্রাণী দেখার সুযোগ অনেক বেড়ে যায়।

ওয়াচটাওয়ার থেকে প্রকৃতির ক্যানভাস

জঙ্গলের বিভিন্ন প্রান্তে তৈরি করা হয়েছে ওয়াচটাওয়ার, যেখান থেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে বন্যপ্রাণীদের কার্যকলাপ দেখা যায়।

  • যাত্রা প্রসাদ ওয়াচটাওয়ার (Jatraprasad Watchtower): এটি পার্কের সবচেয়ে পুরনো এবং জনপ্রিয় ওয়াচটাওয়ার। এর পাশেই রয়েছে নুনের চাপড়া, যেখানে নুন খেতে আসা গণ্ডার, হাতি, বাইসনদের ভিড় লেগেই থাকে।
  • চন্দ্রচূড় ওয়াচটাওয়ার (Chandrachur Watchtower): যারা জঙ্গলের নিস্তব্ধতা আর গভীরতা অনুভব করতে চান, তাদের জন্য এই ওয়াচটাওয়ারটি অসাধারণ। এখান থেকে মূর্তি নদীর অপরূপ দৃশ্যও দেখা যায়।
  • মেদলা ওয়াচটাওয়ার (Medla Watchtower): এই ওয়াচটাওয়ারে পৌঁছানোর জন্য গরুর গাড়িতে করে যাওয়ার অভিজ্ঞতাটা এক কথায় ভোলার নয়। এটি আপনাকে গ্রামের জীবনের এক সুন্দর স্বাদ দেবে।

সাফারির বাইরেও অনেক কিছু

গোরুমারার আকর্ষণ শুধু সাফারির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। মূর্তি নদীর তীরে প্রিয়জনের সাথে বসে সূর্যাস্ত দেখা বা চাপড়ামারি অভয়ারণ্যে একটি দিন কাটানো আপনার ভ্রমণকে আরও স্মরণীয় করে তুলবে। এছাড়াও কাছাকাছি থাকা সামসিং, শুনটালেখোলা, ঝালং বা বিন্দুর মতো জায়গাগুলো ঘুরে আসতে পারেন, যেগুলোর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবেই। এই সব জায়গাগুলি পশ্চিমবঙ্গের লুকানো রত্নগুলির মধ্যে অন্যতম।

থাকার ব্যবস্থা আর কিছু জরুরি কথা

গোরুমারার সবচেয়ে কাছের শহর লাটাগুড়ি এবং চালসা। এখানে বিভিন্ন মানের হোটেল, রিসর্ট এবং সরকারি ফরেস্ট বাংলো রয়েছে। আপনার বাজেট অনুযায়ী যেকোনো একটি বেছে নিতে পারেন। তবে মনে রাখবেন, জঙ্গলে প্রবেশ করার জন্য পারমিট প্রয়োজন, যা বন দপ্তরের অফিস থেকে পাওয়া যায়।

পার্কে ঘোরার সময় কিছু নিয়ম অবশ্যই মেনে চলবেন। যেমন, জঙ্গলে কোনো প্লাস্টিক ফেলবেন না, জোরে কথা বলবেন না এবং প্রাণীদের বিরক্ত করবেন না। আমাদের দায়িত্ব হলো প্রকৃতির এই সুন্দর উপহারকে রক্ষা করা।

প্রকৃতি ও ঐতিহ্যের সাথে একাত্ম হওয়ার সুযোগ

গোরুমারার জঙ্গলে কাটানো প্রতিটি মুহূর্ত আমাদের শেখায় কীভাবে প্রকৃতির সাথে একাত্ম হয়ে বাঁচতে হয়। এই নির্মল পরিবেশে এসে মন আপনাআপনি শান্ত হয়ে যায়, এক আধ্যাত্মিক অনুভূতি হয়। এই অনুভূতিগুলোই আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির মূল ভিত্তি।

ভক্তি লিপিতে (Bhaktilipi) আমরা ঠিক এই সংযোগটিকেই বাঁচিয়ে রাখতে চাই। আমরা শাশ্বত ভক্তি সাহিত্য, পূজার নিয়মাবলী এবং পৌরাণিক কাহিনীগুলোকে আজকের প্রজন্মের কাছে এমনভাবে তুলে ধরি, যা তাদের অনুপ্রেরণা জোগায়। প্রকৃতির মাঝে যেমন ঈশ্বরের সৃষ্টিকে অনুভব করা যায়, তেমনই আমাদের লেখনীর মাধ্যমে আপনি আপনার আধ্যাত্মিক জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে পারেন। আমাদের সাথে যুক্ত থাকতে আমাদের সোশ্যাল মিডিয়া পেজগুলি ফলো করুন:

শেষ করার আগে...

গোরুমারা শুধু একটা ভ্রমণের জায়গা নয়, এটি একটি অভিজ্ঞতা। যখন আপনি নিজের চোখে একটি গণ্ডারকে তার শাবকের সাথে খেলতে দেখবেন বা একঝাঁক ময়ূরকে পেখম তুলে নাচতে দেখবেন, তখন যে আনন্দ পাবেন, তার কোনো তুলনা হয় না। তাই, আপনার ব্যস্ত জীবন থেকে কিছুটা সময় বের করে ঘুরে আসুন প্রকৃতির এই অসাধারণ লীলাভূমি থেকে। বিশ্বাস করুন, এখানকার স্মৃতি আপনার সারাজীবনের সঙ্গী হয়ে থাকবে।

#Gorumara National Park #Hidden Gems 2025 #Biodiversity Travel Guide #Explore Indian Wildlife
Bhaktilipi Team

A passionate group of people dedicated to preserving India's knowledge of Dharma, Karma, and Bhakti for ourselves and the world 🙏.

Comments